নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে দেশে সরকার গঠন হলে সে সরকার অহংকারী হয়ে উঠবে না। দীর্ঘ মেয়াদে জোড়পূর্বক কোন সরকার ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেলে সে অহংকারী হয়ে উঠবে- তাই স্বাভাবিক। যেকোন কিছুর বিনিময়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবে। সেজন্য ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। যাতে করে জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনবান্ধব (শুধুমাত্র ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি নির্ভর না হয়ে) সরকার গঠন করতে পারবে।

দীর্ঘ সময় থেকেই এদেশে রাজনীতির নামে অপরাজনীতি ও পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রেখে দেশের পরিস্থিতি নাজুক করে দিয়েছে।

একটি দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সে দেশের চলমান উন্নতি ও শান্তির পরিবেশকে বিঘ্নিত করে। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সকলকে রাজনীতির বাহিরে গিয়ে জাতীয় স্বার্থে মনযোগী হতে হবে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে, তবে সে পার্থক্য যেন সহিংসতার দিকে নিয়ে না যায়। দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনীতি এমনভাবে এদেশের স্বাভাবিক জনজীবনকে গ্রাস করেছে- কেউ যদি রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট নাও থাকে, তবুও তাকে যেকোন একটা ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। মুষ্টিমেয় কিছু লোক রাজনীতির দোহাই দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তারা শুধুমাত্র ক্ষমতা লাভে বিশ্বাসী, প্রকৃত অর্থে দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী নয়। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়না। রাজনীতির কারণে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি হয়ে নিয়মিত গুম-হত্যার মতো অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত রাজনীতির সুষ্ঠ পরিবেশ আসেনি। তার দায়ভার শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর। শিক্ষায় অনেক উন্নতি সাধিত হলেও রাজনৈতিক নেতাদের মূর্খদের মতো আচরণ জাতিকে হতবাক করে-। ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানে আশা জাগনিয়া- ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা। দক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। অসাংবিধানিক ভাবে বা সংবিধান বহির্ভূত কোন উপায়ে, কোন অজুহাতে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না।’ অথচ আজও পর্যন্ত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা যায়নি।

সারা বিশ্ব প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের অনেক বছর অতিক্রম হলেও সেভাবে কাঠামোগত, আদর্শগত-নীতিগত ভাবে পরিবর্তন আসেনি। অনেক দেশ বহুপরে স্বাধীনতা লাভ করেও এগিয়ে আছে এদেশের থেকে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যখন বিশ্ব অনন্য উচ্চতায় তখন এদেশ রাজনৈতিক চাটুকারিতার বেড়াজালে আবদ্ধ ! এখনো গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচনের জন্য লড়াই করতে হয়। প্রতিবার নির্বাচন বিতর্কিত হয়; যার ফলে কাঙ্খিত উন্নয়ন বারংবার ব্যহত হচ্ছে।

রাজনীতির পিছনে সময় দিতে গিয়ে যুব সমাজ বিজ্ঞানের প্রতি অমনযোগী। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট ঘোষণা করা হলেও প্রযুক্তি খাতে বাজেট খুবই যৎসামান্য। অথচ দেশকে পরিবর্তন করতে হলে বিজ্ঞানের বিপ্লব প্রয়োজন। রাজনীতি নির্ভর দেশের চেয়ে প্রযুক্তি নির্ভর দেশ সকলেরই কাম্য।

ওমায়ের আহমেদ শাওন
(লেখক, কলামিষ্ট ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক)।